এর আগে সবশেষ ২০০৯ সালে ক্যারিবিয়ানদের হারিয়েছিল টাইগাররা। সেই সিরিজ দিয়েই অধিনায়কত্বের শুরু করেছিলেন সাকিব আল হাসান।
বাংলাদেশের দেয়া ২৮৭ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি ক্যারিবীয়দের। তারা ১ উইকেটে ২৩ রান করে মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। লাঞ্চের আগে শেষ বলে তাইজুলের বলে শর্ট লেগে শাহাদাত হোসেন দিপুর হাতে ক্যাচ দেন মিকাইল লুইস। এক পা এগিয়ে ডিফেন্স করতে চেয়েছিলেন লুইস। বল তার ব্যাটে লেগে জুতো ছুঁয়ে ক্যাচ হয়ে যায়। শুরুতে আম্পায়ার আউট না দিলেও রিভিউ নিয়ে লুইসকে ফেরায় বাংলাদেশ।
বিরতি থেকে ফিরে এসে কেসি কার্টিকে উইকেটের পেছনে লিটন দাসের ক্যাচ বানিয়ে আউট করেছেন তাসকিন। এরপর ক্যারিবীয়দের হাল ধরেন অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট ও কেভাম হজ। এই দুজনে ৩৫ রান যোগ করেন। হাফ সেঞ্চুরির আগেই ব্র্যাথওয়েটকে নিজের শিকার বানান তাইজুল। এই বাঁহাতি স্পিনারের বলে স্লিপে মেহেদী হাসান মিরাজকে ক্যাচ দিয়েছেন ৪৩ রান করা ব্র্যাথওয়েট।
আরেক ক্যারিবীয় ব্যাটার অ্যালিক আথানেজকে বোল্ড করে ফিরিয়েছেন তাইজুল। বাঁহাতি এই স্পিনারের টসড আপ ডেলিভারিতে ড্রাইভ করতে গিয়ে বলের লাইন মিস করে বোল্ড হয়েছেন ৫ রান করা এই ব্যাটার। এরপর অবশ্য হজ ও জাস্টিন গ্রিভস মিলে চা বিরতি পর্যন্ত ক্যারিবিয়দের টেনেছেন। বিরতির পর আবারও ক্যারিবীয় শিবিরে আঘাত হানেন তাইজুল। তিনি হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেয়া হজকে এলবিডব্লিউ করে আউট করেন। ৭৫ বলে ৫৫ রান করে ফেরেন এই ব্যাটার।
তৃতীয় সেশনে প্রথমবার বল হাতে নিয়ে দ্বিতীয় বলেই উইকেট তুলে নেন তাসকিন। বোল্ড করে ফেরান গ্রিভসকে (৪৫ বলে ২০ রান)। এরপর ফাইফার তুলে নিতে বেশি সময় নেননি তাইজুল। তিনি এলবিডব্লিউ করে ফিরিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান জশুয়া দা সিলভাকে (১৮ বলে ১২ রান)। এ নিয়ে টেস্টে ১৫তমবারের মতো পাঁচ উইকেট পেলেন এই বাঁহাতি স্পিনার।
খানিক বাদে তাসকিনকে বদলে হাসান মাহমুদের হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক মিরাজ। বল করতে এসেই প্রথম বলে আলজারি জোসেফকে বোল্ড (২১ বলে ৫ রান) করে ফেরান হাসান। এরপর তিনি কেমার রোচকেও এলবিডব্লিউ বানিয়ে আউট করেন। রিভিউ নিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে আম্পায়ার্স কলের কারণে সেই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের পক্ষে আসে। ক্যারিবীয়দের শেষ ব্যাটার শামার জোসেফকে বোল্ড করে বাংলাদেশকে জয় এনে দিয়েছেন নাহিদ রানা।
এর আগে প্রথম ইনিংসে ১৮ রানের লিড তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ। শাহাদাত হোসেন দিপু, সাদমান ইসলাম, জাকের আলী অনিক ও মেহেদী হাসান মিরাজদের ব্যাটে চতুর্থ দিনই ৫ উইকেট হারিয়ে ১৯৩ রান করেছি টাইগাররা। আগের দিন শেষ বিকেলে তাইজুল ইসলামকে নিয়ে ধৈর্যশীল ব্যাটিংয়ের নিদর্শন রেখেছিলেন জাকের আলী।
চতুর্থ দিনের শুরুতেও এই দুজনের সেই ধৈর্য অব্যাহত থাকে। যদিও দিনের শুরুতেই রিভিউ নষ্ট করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আলজারি জোসেফের বাউন্সারে পুল করতে গিয়ে মিস করেছিলেন জাকের। বল সোজা আঘাত হানে তার হেলমেটে। এরপর সেই বল লুফে নেন জোসেফ নিজেই।
তিনি আউটের জন্য আবেদন করেন। যদিও তাদের আবেদনে সাড়া দিলেন না আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা। এরপর রিভিউ নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। রিভিউতে দেখা যায় বল লেগেছে হেলমেটে। এর মধ্যে দিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের তিন রিভিউয়ের প্রথমটি নষ্ট হয়।
অবশ্য উইকেটের দেখা পেতে বেশিক্ষণ অপেক্ষায় থাকতে হয়নি ক্যারিবীয়দের। জোসেফের লাফিয়ে ওঠা বল ডিফেন্স করতে গিয়ে স্লিপে কেভাম হজকে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছেন তাইজুল। আর তাতেই চতুর্থ দিন বাংলাদেশের প্রথম উইকেটের পতন হয়। তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৪ রান। এরপর মুমিনুল ফিরেছেন শূন্য রানে। কেমার রোচের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি।
এরপর হাসান মাহমুদ কেমার রোচের বলে প্রথম স্লিপে ক্যাচ দেন। আর তাসকিন আহমেদ বোল্ড হয়েছেন সেই রোচের বলেই। এরপর শেষ উইকেটে নাহিদ রানাকে নিয়ে জাকের যোগ করেছেন ২২ রান। যদিও এই জুটিতে রানার অবদান মাত্র ১ রান। প্রথম ইনিংসে ক্যারিবীয়দের হয়ে ৩টি উইকেট উইকেট নেন রোচ ও জোসেফ। আর দুটি উইকেট পান শামার জোসেফ। একটি করে উইকেট গেছে জেইডেন সিলস ও জাস্টিং গ্রিভসের ঝুলিতে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
বাংলাদেশ (প্রথম ইনিংস)- ১৬৪/১০ (৭১.৫ ওভার) (সাদমান ৬৪, মিরাজ ৩৬, শাহাদাত ২২, তাইজুল ১৬; সিলস ৪/৫, শামার ৩/৪৯ )
ওয়েস্ট ইন্ডিজ (প্রথম ইনিংস)- ১৪৬/১০ (৬৫ ওভার) (ব্র্যাথওয়েট ৩৯, কার্টি ৪০, লুইস ১২, হজ ৩, অ্যাথানাজে ২; নাহিদ ৫/৬১, তাসকিন ১/১৭)
বাংলাদেশ (দ্বিতীয় ইনিংস)- ২৬৮/১০ (৫৯.৫ ওভার) (জয় ০, সাদমান ৪৬, দিপু ২৮, মিরাজ ৪২, লিটন ২৫, জাকের ৯১, আলজারি ৩/৭৭, রোচ ৩/৩৬)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ (দ্বিতীয় ইনিংস)- ১৮৫/১০ (৫০ ওভার) (ব্র্যাথওয়েট ৪৩, কার্টি ১৪, হজ ৫৫, গ্রিভস ২০; তাইজুল ৫/৫০, হাসান ২/২০, তাসকিন ২/৪৫)