শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেলে স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক কাজী শরিফুল ইসলাম শুনানি শেষে এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে পুলিশ উভয় আসামিকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি মফিজুল হক ভূঁইয়া।
তিনি বলেন, ‘আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার প্রধান আসামি চন্দন দাসের ৭ দিন এবং তদন্তেপ্রাপ্ত অপর আসামি রিপস দাসের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।’
নিহত আইনজীবী আলিফের বন্ধু অ্যাডভোকেট মো. রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী বলেন, ‘আমি আমার প্রিয় বন্ধু আলিফ হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ বিচার চাই। আমার বন্ধুকে তারা দিনে-দুপুরে নৃশংসভাবে খুন করেছে। পুলিশকে অনুরোধ করবো বাকি আসামিদেরও যেন অতিদ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয়।’
এর আগে, কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে এ দুই আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। সকাল থেকেই পুরো আদালত চত্বর ও আশপাশের এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আদালত রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করার পর হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে আদালত ভবনে স্লোগান দিতে থাকেন অন্যান্য সাধারণ আইনজীবীরা। এ সময় তারা হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইসকনকেও নিষিদ্ধের দাবি জানান।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা মামলার প্রধান আসামি চন্দন দাসকে বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) ভোরে ভৈরব রেলওয়ে স্টেশন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর রাতে তাকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এছাড়াও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা থেকে আলিফ হত্যার তদন্তে প্রাপ্ত আরেক আসামি রিপন দাসকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পুলিশ বলছে, আইনজীবী হত্যার ওই ভাইরাল ভিডিওতে কমলা রঙের টি-শার্ট ও কালো প্যান্ট পরিহিত চন্দন (৩৫) ছুরি হাতে সাইফুলকে কোপ দিচ্ছিলেন। চন্দনের মাথায় ছিল হেলমেট। আর রিপনকে ফুটেজে নীল রঙের গেঞ্জি হাতে বটি নিয়ে দেখা গেছে। তবে তিনি হত্যা মামলার এজাহারনামীয় আসামি নন। এ পর্যন্ত চাঞ্চল্যকর এই হত্যায় জড়িত মোট ১১ জনকে গ্রেপ্তার করলো পুলিশ।
উল্লেখ্য, গত ২৫ নভেম্বর চট্টগ্রামে ফেরার পথে শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীকে তুলে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
পরদিন তাকে নগরের কোতোয়ালী থানায় হওয়া একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তোলা হলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করেন।
এর পরে চিন্ময়কে কারাগারে পাঠানোর জন্য প্রিজনভ্যানে তোলা হয়। তখন তার অনুসারীরা প্রিজনভ্যান আটকে দেন। তারা এ সময় প্রায় তিন ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) লাঠিপেটা করে ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীর অনুসারীদের সংঘর্ষ হয়। পরে চট্টগ্রাম আদালত ভবনে প্রবেশপথের বিপরীতে রঙ্গম সিনেমা হল গলিতে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে আদালত এলাকায় সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও পুলিশের কাজে বাধাদানের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা দায়ের করে।
এছাড়া আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের বাবা বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা এবং ভাই খানে আলম বাদী হয়ে যানবাহন ভাঙচুর ও জনসাধারণের উপর হামলার ঘটনায় ১১৬ জনকে আসামি করে বিস্ফোরক আইনে আরেকটি মামলা করেন নগরের কোতোয়ালী থানায়।